ছবি : সংগৃহীত
কঙ্গো এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে প্রতি ঘণ্টায় ৪৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এমন কি সেখানে স্ত্রীরাও স্বামীদের হাতে ধর্ষণের শিকার হন। রাগের বশে স্ত্রীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বামীরা। নৃশংসভাবে তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে মিলিত হন। কোনো কোনো স্বামী একে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এক জরিপের প্রতিবেদন তুলে ধরে এমনটাই বলা হয়েছে বিবিসির খবরে।
খবরে তুলে ধরা হয়েছে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় গ্রাম রুৎশুরুর বাসিন্দা মোইসেস বাগউইজার অভিজ্ঞতা। তিনি সামান্য রেগে গেলেই স্ত্রীর সঙ্গে সহিংস যৌন মিলনে আবদ্ধ হন। তিনি স্বীকার করেছেন ‘তার সাথে যৌনমিলন করাটা ছিল একটা যুদ্ধের মতো।’
তিনি বলেন, ‘স্ত্রী যে কাপড়ই পরে থাকুক - আমি তা ছিঁড়ে ফেলে দিতাম।’ এ থেকেই বোঝা যায় তিনি যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময় কি রকম আচরণ করতেন স্ত্রীর সঙ্গে।
পৃথিবীর যেসব দেশে যৌন সহিংসতার মাত্রা সবচেয়ে বেশি তার অন্যতম কঙ্গো। মোইসেস বাগউইজার স্ত্রীর নাম জুলিয়েন বাগউইজা। তার স্বীকারোক্তিতে তেমনটাই স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, তার স্বামীর মেজাজ খারাপ থাকলে সহিংসতা ছাড়া তাদের যৌন মিলন হতে পারতো না। এ জন্য মোইসেস বাগউইজা এখন তার যৌন সহিংসতার জন্য দু:খিত বোধ করেন। অনুতাপের সাথেই তিনি বর্ণনা করছিলেন বিশেষ করে একটি ঘটনার কথা।
মোইসেস বাগউইজা বলেন, তখন তার স্ত্রী চার মাসের অন্ত:সত্বা। তিনি স্থানীয় মেয়েদের এক সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গোপনে কিছু টাকা জমাচ্ছেন, এ কথা জানার পর স্বামী দাবি করলেন, তাকে এক জোড়া জুতো কেনার টাকা দিতে হবে। স্ত্রী তা দিতে অস্বীকার করায় তার পেটে লাথি মারেন মোইসেস। তাতে তার স্ত্রী মাটিতে পড়ে গেলেন, তার দেহ থেকে রক্ত বেরুতে লাগলো। তার প্রতিবেশীরা ছুটে এলেন, তাকে হাসপাতালে নেয়া হলো।
মোইসেস বাগউইজা বললেন, ‘এটা ঠিক যে ওই টাকাটা তারই ছিল, কিন্তু আজকাল যেমন হয় যে মেয়েদের হাতে অর্থ থাকলে তারা নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করে এবং তারা সেটা প্রদর্শন করে।’
তার গ্রামের আরেকজন নির্মাণকর্মী তার জীবনের কথা বলেন। তার ভাষায়, সহিংসতা ছিল তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগের একমাত্র উপায়।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে নিজের সম্পদ বলে মনে করতাম। আমি ভাবতাম আমি তার সাথে যা খুশি তাই করতে পারি। যেমন ধরুন, আমি বাড়ি ফিরলাম - স্ত্রী আমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলো। অমনি আমি তাকে একটা ঘুষি মারলাম।’
অর্থ উপার্জনকারী মেয়েদের ব্যাপারে আফ্রিকান পুরুষদের মনে যে লুকোনো বিরাগ রয়েছে - অনেকের মতে সেটাই হলো আধুনিক আফ্রিকান পুরুষদের সংকটের মূল।
বহুকাল ধরে এ মহাদেশে পুরুষরা বেড়ে উঠেছে এই ধারণা নিয়ে যে - পুরুষ মানেই হলো শক্তি, যার ক্ষমতা আছে তার নিজের পরিবারকে খাদ্য ও সুরক্ষা দেবার।
কিন্তু এখন পুরুষদের মধ্যে বেকারত্বের হার উচ্চ, অন্যদিকে নারীরা অনেকে চাকরি করছে, তাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে ক্রমশ। তাই চিরাচরিত সেই পুরুষের ভূমিকা পালন করা এখন কঠিন হয়ে উঠছে।
মোইসেস বাগউইজার মতে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন একজন নারীকে মনে করা হয় পৌরুষের প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে।
কঙ্গো মেন'স নেটওয়ার্ক নামে এনজিওর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলট আলফন্স বলছেন, ‘এটাকে শুধু যুদ্ধের পটভূমিতে দেখলে চলবে না। ব্যাপারটা আরো গভীর। আমরা মেয়েদেরকে আমাদের অধীনস্থ হিসেবে দেখার এই মানসিকতাটা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। পুরুষরা মনে করে তাদের যে কোনো সময় যৌনমিলন করার অধিকার আছে। যে ক্ষমতা ও সামাজিক অবস্থান কঙ্গোলিজ পুরুষরা চায়, যৌন সহিংসতাটা তারই একটা বহিপ্রকাশ।’