একসময়ের জনপ্রিয় শিরমাল এখন প্রায় বিলুপ্ত। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবারের নাম শিরমাল বা শিরমাল রুটি। এককালের বিখ্যাত খাবারটির কথা এখন হয়তো অনেকেই জানেন না। খাবারটি ঢাকায় নিয়ে আসেন মোঘল শাসকরা। তাদের শাসনামল থেকে ঊনিশ শতক পর্যন্ত খাবারটির বেশ প্রচলন ছিল।
একসময়ের জনপ্রিয় শিরমাল এখন প্রায় বিলুপ্ত। কালেভদ্রে এর দেখা মেলে। শবেবরাত বা বিশেষ কোনো উপলক্ষে পুরান ঢাকায় মাঝেমধ্যে পাওয়া যায় এই রুটি।
শিরমাল শব্দটি ফারসি ভাষার। ‘শির’ শব্দের অর্থ দুধ, আর মাল অর্থ দলা করা প্রথমদিকে সুজি দিয়ে তৈরি করা হতো। পরে ময়দার ব্যবহার শুরু হয়।
ইতিহাসবিদদের তথ্যমতে, ঢাকায় মুঘল সুবেদাররার শিরমাল নিয়ে আসেন। অভিজাত পরিবারে ভোজ অনুষ্ঠানে বাড়িতে তন্দুর বসিয়ে অভিজ্ঞ বাবুর্চি দিয়ে শিরমাল তৈরি করা হতো। আসল শিরমালে ব্যবহার করা হতো মাওয়া, ঘি ও দুধ। এতে একেবারেই পানির ব্যবহার ছিল না।
প্রথমে ময়দার সঙ্গে মেশানো হতো মাওয়া। কিছুক্ষণ পর ঘি আর বাকি ময়দা দিয়ে দুধ মিশিয়ে দলা করা হতো। কয়েক ঘণ্টা ভেজা চাদরের নিচে রাখার পর রুটি বানিয়ে তন্দুরে সেঁকা হতো। সেঁকার সময় একটু পর পর দুধের ছিটা দেওয়া হতো। এতে রুটিতে লালচে ভাব আসতো, ঘ্রাণও বাড়তো।
শিরমাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্ধ্যায় তৈরি করা হতো। রাতের খাবারে দুধ বা কোরমা দিয়ে খাওয়া হতো। ভোরে শিরমালের খামির দিয়ে যে রুটি তির হতো তাকে বলা হতো গাওদিদাহ।
সবচেয়ে ভালো শিরমাল তৈরি করতেন ভারতের লখনৌ থেকে আসা হালুইকররা। তখন শিরমাল ছিল কয়েক রকম। তন্দুরে থাকা অবস্থায় দুধ ছিটিয়ে যে রুটি তৈরি করা হতো তা রওগনি শিরমাল নামে পরিচিত ছিল।
ঘি ছাড়া রোগীর জন্য তৈরি হতো ডিম্বাকৃতির আরেক রকম শিরমাল। এর নাম ছিল গাওজবান। শিরমাল ঢাকায় ‘সুখি’ ও ‘নিমসুখি’ নামেও পরিচিত ছিল।