ছবি : সংগৃহীত
ইয়াসির রাফা :
"শেষ বিকেলের প্রণয়" কথাটির মাঝে কোথায় যেন এক করুণ সুর আছে। প্রেম, অপ্রেম, ভালবাসা এসব কিছুই তো আপেক্ষিক। তারপরেও আমরা কেন পরমভাবে এত নিমগ্ন হই? পৃথিবীর সব পুরুষের জীবনেই একজন কাঙ্ক্ষিত প্রেমিকা থাকে? সবাই কি তাকে পরম করে পায় নাকি সে প্রিয়তমা আধরাই থেকে যায়?
এ জীবন কিসে বড় হয় স্মৃতিতে নাকি বিরহে? নাকি এমন কিছু যা প্রকাশ করা যায় না কখনোই? একারণেই কি প্রখর রোদে হঠাৎ করে কঠিন মানুষটাও উদাস হয়ে শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকে? যা অনাঘ্রাতা রমণীর প্রতি আবেগকে তার শেষ রেখায় মিলিয়ে দেয়!
রাত্রি নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ে বসে আছে। বিশাল ঘোমটা মাথায়। নিজের মাঝে অদ্ভুত এক লজ্জা কাজ করছে। কেন করছে তাও জানে নাহ। হয়তো জীবনের এই বিশেষ ক্ষণে লজ্জা তার আপন মহিমায় আবিভূর্ত হয়। জনাব মনিরুজ্জামান তার ভবিতব্য স্ত্রীর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আছে। বেশ সুন্দর দেখতে। গোলগাল মায়াবী চেহারা।
ছেলের বাবা রাত্রির হাতে এক হাজার টাকা গুজে দিলেন। রাত্রিকে ভেতরে চলে বলা হল। কিন্তু রাত্রি গেল না। দরজার পেছনে আড়ি পেতে দাঁড়িয়ে রইল। ছেলের চাচা বললেন, ‘ভাই সাহেব আপনার মেয়ে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। আপনার আপত্তি না থাকলে আমরা চাইছি আজকেই বিবাহ সম্পূর্ণ করতে। পরে না হয় অনুষ্ঠান করা যাবে।’
রাত্রির মামাও সম্মতি দিলেন, 'ছেলে যেহেতু পরিচিত, তাহলে আর আপত্তি কি?'
অন্যদিকে নাফিজ নামের একটা ছেলে ছাতিম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। নাফিজের মনে হচ্ছে একটু পরেই বৃষ্টি নামবে। অথচ আজ আকাশে কোন মেঘই নেই।
'তুমি যে নীল রঙের দুঃখ
আমি ছুঁই আলতো হাতে
তুমি যেন জোছনা শেষে ঝড়ের আকাশ-
আমি ভিজি বৃষ্টিতে।
অনেক খানি আকাশ জুড়ে কাজল ঝরে,
যাদু আমার কান্না করে না,
যাদু আমার কান্না করিস না।'
সমাপ্তি কি এভাবেই ঘটে? সত্যি ভালোবাসার অনল কি জাতীয় ব্যাপার তা-ই বুঝে উঠার আগেই আকাশ এমন ভারি হয়ে যায় কেন!
মতিন সাহেব এর এত শূন্যতা অনুভব হচ্ছে কেন! নাফিজরা কেন বৃষ্টিতে ভিজতে ভয় পায়? আর রাত্রিরা কেনই বা আধরা থেকে যায়!
"শেষ বিকেলের প্রনয়" আন্তদৃষ্টির দিক থেকে কল্প-যাতনায় পাঠকের মুগ্ধতা ছড়াবে বলেই আশা করা যায়।
"শেষ বিকেলের প্রনয়" এক প্রেম, অপ্রেম, প্রনয় কিংবা এমন কিছুর এক শিল্পিত কাহিনী যার সাথে জীবন কোথায় মিলে যায় বলা মুশকিল! কথাসাহিত্যিক ও কবি গাজী সাইফুল এর প্রথম উপন্যাস "শেষ বিকেলের প্রনয়"। প্রকাশ ২০১৬, বইটি প্রকাশ করেছে- তৃতীয় চোখ প্রকাশনী। মলাট মূল্য ১৮০ টাকা। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পাওয়া যাচ্ছে ৯৩ নং স্টল, লিটলম্যাগ প্রাঙ্গন, বহেরাতলা। লেখকের অনুরাগ মাখা স্মৃতিচারণ, আত্না কথন ও ভালবাসায় মোড়া এক হারানো অথচ বিশ্বাস এর খন্ড খন্ড আখ্যানশৈলী খুব নিপুণভাবে গাঁথা হয়েছে এ উপন্যাস। শুধু সাবলীলভাবে শব্দ বিন্যাস নয় পাবেন লেখকের কবিতার আশ্রয়ে ফুটে উঠা প্রকাশভঙ্গীর এক অনন্য স্বাদ।
গাজী সাইফুল এর গন্তব্য অনেক দূর। 'শেষ বিকেলের প্রনয়' এর মধ্য দিয়ে সাহিত্যের চৌকাঠে পা রাখলেও সাহিত্য চর্চা করে আসছেন ছোটবেলা থেকেই। প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা তাকে ভালবাসা দিয়েই গ্রহণ করে নিবেন।